Breaking News
recent

রাঙ্গামাটি ✈

 রাঙ্গামাটি


রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা গুলোর মধ্যে একটি এবং আয়তনে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। ১০টি ভাষাভাষীর ১১টি জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সাংস্কৃতিক, নৃতাত্ত্বিক কৃষ্টি এবং প্রকৃতির অপার সৃষ্টি এই জেলা বাংলাদেশের পর্যটনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

রাঙ্গামাটি জেলার জনপ্রিয় ভ্রমণ স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো: কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, শুভলং ঝর্ণা, সাজেক ভ্যালী, নৌ বাহিনীর পিকনিক স্পট, কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি ভাস্কর্য, উপজাতীয় জাদুঘর, কর্ণফুলি কাগজ কল, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, প্যানোরমা জুম রেস্তোরা, পেদা টিং টিং রেস্তোরা, টুকটুক ইকো ভিলেজ, চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার, বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স, ডলুছড়ি জেতবন বিহার ইত্যাদি। 


পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলা।
আর কাপ্তাই উপজেলা অনন্য পাহাড়, লেকের অথৈ জলরাশি এবং চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহে। ১১,০০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এই কৃত্রিম হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আয়তনে সর্ববৃহৎ। এখানে চোখে পড়ে ছোট বড় পাহাড়, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা, ঝর্ণা আর জলের সাথে সবুজের মিতালী।

একদিকে যেমন পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্ভার তেমনি লেকের অথৈ জলে রয়েছে বহু প্রজাতির মাছ ও অফুরন্ত জীববৈচিত্র। লেকের চারপাশের পরিবেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, নানাবিধ পাখি এবং জল কেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে প্রতি মূহুর্ত। কৃত্রিম হলেও প্রকৃতি তার সমস্ত রুপে উজাড় করে সাজিয়েছে কাপ্তাই হ্রদকে। সারা বছরই কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake) ভ্রমণের জন্য যাওয়া যায় তবে বর্ষায় লেকের পাশের ঝর্ণাগুলোর পরিপূর্ণ রূপের দেখা মিলে।


কি দেখবেন

প্রকৃতি প্রেমিরা বোট বা নৌকা ভাড়া করে লেকের জলে ভাসতে ভাসতে চারপাশটা দেখে নিতে পারেন। পাহাড় থেকে লেকের সৌন্দর্য দেখতে কাপ্তাই লেক প্যারাডাইস পিকনিক স্পট থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

দল বেঁধে নৌ বিহার কিংবা প্যাডেল বোটে চড়ে লেক ভ্রমণ করার সুযোগও রয়েছে এখানে। এছাড়া স্পিডবোট/নৌকা রিজার্ভ নিয়ে কাপ্তাই লেক ঘুরে দেখার পাশাপাশি রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, রাঙ্গামাটি শহর সহ আরও অনেক স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। কাপ্তাইয়ের কাছেই কর্ণফুলি নদীতে কায়াকিং করার ব্যবস্থা আছে। চাইলে সেই অভিজ্ঞতাও নিতে পারবেন। ক্যাবল কারের চড়ার মজা নিতে চাইলে যাবেন শেখ রাসেল ইকোপার্কে।

পর্যটনপ্রেমী মানুষের কাছে রাঙ্গামাটি জেলার একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। পর্যটকদের মোহিত করতে রাঙ্গামাটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র।


এদের মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত ৩৩৫ ফুট লম্বা ঝুলন্ত ব্রিজ উল্লেখযোগ্য। রাঙ্গামাটিতে ভ্রমণে আসা সকল পর্যটকই ‘সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি’ হিসাবে খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি দেখতে আসেন। কাপ্তাই লেকের বিচ্ছিন্ন দুই পাড়ের পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে রঙিন এই ঝুলন্ত সেতু। এই সেতুতে দাঁড়িয়ে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করা যায়। ব্রিজের এক পাশে পাহাড়ের উপর শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে দোলনা, স্লিপার ইত্যাদি। লেকে ভ্রমণের জন্য ব্রিজের নিচে ইঞ্জিন চালিত বোট ঘন্টা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যায়। ঝুলন্ত ব্রিজে প্রবেশের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনকে জনপ্রতি ২০ টাকা ফি দিতে হয়।

কখন যাবেন ও কি দেখবেন

ঝুলন্ত ব্রিজ (Hanging Bridge) দেখতে বছরের যে কোন সময়ই যেতে পারেন। তবে বর্ষায় অতি বৃষ্টি হলে অনেক সময় ঝুলন্ত ব্রিজের উপর পানি উঠে যায়। সেইসময় ঝুলন্ত ব্রিজের উপরে যাওয়া না।

তাই বর্ষায় গেলে আগেই খোঁজ নিয়ে যাবেন। সাধারণত শীতের আগে আগে ও শীতকালেই পর্যটকগন ঝুলন্ত সেতু ভ্রমণে যান। রাঙ্গামাটি গেলে শুধু ঝুলন্ত ব্রিজ নয় আশেপাশে আছে আরও দর্শনীয় স্থান যা আপনি একইদিনে একসাথে ঘুরে দেখতে পারবেন। সারাদিনের জন্যে ট্রলার রিজার্ভ করে নিলে ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্ণা, রাজবন বিহার, লেক ভ্রমণসহ আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখায়। কি দেখবেন সেইভাবে পরিকল্পনা করে ট্রলার/বোট রিজার্ভ করে নিন।

Google Maps Link : (Click Here)

মুপ্পোছড়া ঝর্ণা (Muppochora Jhorna) প্রস্থের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম বড় একটি ঝর্ণা। অনিন্দ্য সুন্দর মুপ্পোছড়া ঝর্ণা দেখতে হলে রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বাঙ্গালকাটায় যেতে হবে। কাপ্তাই লেক পাড়ের এই উপজেলা সাথে সড়ক পথে কোন সংযোগ নেই।
কাপ্তাই উপজেলা হতে শুধুমাত্র নৌ-পথে এই উপজেলায় যাওয়া যায়। দূর্গম পার্বত্য এলাকা হওয়ায় এখানে অসংখ্য ছোট বড় পাহাড়ে আছে প্রচুর ঝর্ণা। চাকমা শব্দ বিলাই অর্থ বিড়াল এবং ছড়ি অর্থ পাহাড় হতে প্রাবাহিত ঝর্ণা। মুপ্পোছড়া ঝর্ণা বিলাইছড়িতে অবস্থিত বৃহত্তম ঝর্ণাগুলোর একটি। বিলাইছড়ি হতে শুধুমাত্র নৌপথে বাঙ্গালকাটাতে যাওয়া গেলেও বাঙ্গালকাটা হতে ট্রেকিং করে মুপ্পোছড়া ঝর্ণায় যেতে হয়। 

মুপ্পোছড়া ঝর্ণায় যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি কাপ্তাই পর্যন্ত আসতে পারবেন। কাপ্তাইয়ের লঞ্চঘাট থেকে বিলাইছড়ি যাওয়ার ট্রলার পাওয়া যায়। ট্রলার রিজার্ভ নিলে ১০০০ থেকে ১৫০০ ভাড়া লাগবে। আর লোকালে গেলে জনপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা লাগবে। কাপ্তাই হতে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে প্রথম ট্রলার এবং পরবর্তীতে দুপুর ১ টা এবং ১ টা ৩০ মিনিটে পর পর দুইটি লোকাল ট্রলার বিলাইছড়ি উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

কাপ্তাই থেকে ট্রলারে বিলাইছড়ি যেতে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত সময় লাগে। পথে বিলাইছড়ি বাজারে প্রয়োজনীয় খাবার খেয়ে আরো কিছু শুকনো খাবার সাথে নিয়ে নিন। বিলাইছড়ির হাসপাতাল ঘাট থেকে অন্য একটি ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে বাঙ্গালকাটা যেতে হবে। বিলাইছড়ি হতে বাঙ্গালকাটা পর্যন্ত ৬০০-৮০০ টাকা ভাড়া লাগবে। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর বাঙ্গালকাটায় নেমে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় গাইড ঠিক করে বেড়িয়ে পড়ুন মুপ্পোছড়ার পথে। প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টা ট্রেকিং শেষে পৌঁছে যাবেন মনোমুগ্ধ মুপ্পোছড়া ঝর্ণার পাদদেশে।

No comments:

Powered by Blogger.