Breaking News
recent

১০টি মস্তিষ্কের খাবার, যা আপনার মনকে সব সময় সতেজ রাখবে!



বর্তমান সময়ে মানুষ তার খাবারের ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন। নিজেদের স্বাস্থ্যকে সুস্থ সবল রাখতেই মূলত তাদের এই সচেতনতা। এই খাদ্য তালিকায় নতুন নতুন যোগ হচ্ছে নানা ধরনের খাবার। কোন খাবার হার্টের জন্য ভালো যেমন, তেল বা চর্বি নেই এমন খাবার, আবার কোন খাবার ত্বকের জন্য ভালো। ঠিক একইভাবে আপনার মস্তিষ্কের জন্যও রয়েছে কিছু খাবার। যেগুলো আপনার মস্তিষ্ককে শুধু গ্লুকোজ বা শর্করা সর্বরাহ করে না , পাশাপাশি আপনার মনকে সতেজ বা ভালো রাখার কাজটিও করে থাকে। ব্যাপারটা এমন যে আপনি যেমন আপনার প্রিয় খাবার দেখলে খুশি হন, একইভাবে আপনার মস্তিষ্কও যখন তার প্রিয় খাবার গুলো দেখে তখন আপনার মনকে খুশি করে।

মস্তিষ্কের খাবার কী?
গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে মস্তিষ্কের খাবার আসলেই বিদ্যমান রয়েছে। মস্তিষ্কের উপর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে এমন খাবারই হল মস্তিষ্কের খাবার বা Brain Food। এই নিবন্ধে আপনারা ১০টি মস্তিষ্কের খাবার সম্পর্কে জানতে পারবেন যা নিয়মিত গ্রহণ করলে আপনার মন সতেজ থাকবে পাশাপাশি মন হবে প্রখর।
১. Green Tea বা সবুজ চা
আমাদের মধ্যে অনেকেই কফি পছন্দ করেন আবার অনেকেই চা পছন্দ করেন। উভয় প্রকার পানীয়তেই ক্যাফেন থাকে।
কিন্তু Green Tea বা সবুজ চায়ে ক্যাফেনের পাশাপাশি এল-থিয়াইন (L-theanine) রয়েছে যা মূলত আপনার মস্তিষ্কের উদ্বেগের(Anxiety) মাত্রা কমিয়ে দেয়। এটি ডোপামাইন এবং আলফা ওয়েভ উত্পাদনের মাত্রা বৃদ্ধি। যা আপনাকে উদ্বেগমুক্ত (Anxiety-free) হতে সাহায্য করে। কফির তুলনায় সবুজ চায়ের মধ্যে ক্যাফেনের পরিমান কম, যা এই পানীয়কে মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পানীয় হিসেবে প্রমান করে। ক্যাফেন এবং এল-থিয়াইন(L-theanine)  সিনার্জিস্টিক প্রভাব প্রদর্শন করে, যা সবুজ চাতে পাওয়া ক্যাফিনের পরিমানের সাথে সর্বোত্তমভাবে কাজ করে।
গবেষনা থেকে জানা যায়, যারা কফি পান করে তাদের তুলনায়, যারা সবুজ চা বা Green Tea পান করে তারা বেশি স্থিতিশীল এবং উৎপাদনশীল(Productive)। সুতরাং, আপনি যদি মস্তিষ্কের খাবার খুঁজে থাকেন যা আপনার উত্পাদনশীলতাকে উন্নত করবে তাহলে সবুজ চা বা Green Tea আপনার পছন্দের তালিকায় সবার প্রথমে থাকবে।
২. Blueberries
ব্লুবেরি প্রকৃতির অন্যতম সেরা উপহার। ব্লুবেরিকে বলা হয় এন্টিঅক্সিডেন্টের রাজা। এক গবেষনায় দেখা গেছে কোন ব্যাক্তি যদি নিয়মিত ১২ সপ্তাহ ধরে ব্লুবেরি জুস পান করে তাহলে তার স্মৃতিশক্তি পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু অতিরিক্ত ব্লুবেরি খাওয়াও আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চেষ্টা করুন দিনে ১১৫ গ্রামের বেশি ব্লুবেরি না খেতে। এর চেয়ে বেশি গ্রহণ করলে তা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাবে।
৩. Orange বা কমলা
কমলাতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। একটি বড় কমলা আপনার দৈনন্দিন ভিটামিন সি এর শতভাগ পূরণ করার জন্য যথেষ্ট। ভিটামিন সি-এর অনেক সুবিধা আছে:
  • ভিটামিন সি হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
  • এটি উচ্চ রক্তচাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।
  • সাদা রক্ত ​​কোষ উত্পাদন বৃদ্ধি করে ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ: ভিটামিন সি আপনার স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৪. Broccoli
ব্রোকলি আপনি যেকোন ভাবেই খেতে পারেন। আপনি এটিকে চাইলে রোস্ট করতে পারেন আবার সিদ্ধ করেও খেতে পারেন। এতে এর গুনাগুন নষ্ট হবে না। ব্রোকলি সবক্ষেত্রেই আপনার মস্তিষ্কের প্রখরতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

এতে প্রধানত দুইটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল ভিটামিন কে। যা আপনার জ্ঞান সম্পর্কিত (Cognitive) দক্ষতা গুলো বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আরেকটি পুষ্টি উপাদান হল কোলিন (Choline) যা আপনার স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করবে।
৫. Walnut বা আখরোট
Walnut বা আখরোট সকল বাদামের মতই উপকারি। তবে অন্যগুলোর থেকে এর মূল পার্থক্য হল এতে ওমেগা ৩-ফ্যাটি এসিড (Omega 3-Fatty acid) রয়েছে। আপনার হৃদরোগের সমাধান করার পাশাপাশি এই উপাদানটি আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক। বিশেষ করে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি অধিক কার্যকর।
একই সাথে আখরোটে ভিটামিন ই উপস্থিত। যা আপনার স্মৃতিকোষ বা মেমরি সেল নষ্ট হওয়ার মাত্রাকে হ্রাস করে।
৬. Strawberry
 স্ট্রবেরি অন্যান্য বেরি ফলের মতই মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারি। এটি বয়সের সাথে ক্ষয় হতে থাকা স্মৃতিকোষ বা মেমরি সেলের ক্ষয় হওয়ার মাত্রাকে হ্রাস করে। পাশাপাশি এটি অ্যালজাইমার(Alzheimer) রোগ প্রতিরোধ করতে পারেl।
এছাড়াও স্ট্রবেরিতে প্রচুর পরিমানে পটাসিয়াম থাকে। যা মস্তিষ্ক সহ সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে৷
গবেষনা বলে প্রতিদিন যদি কমপক্ষে ৮টি স্ট্রবেরি খাওয়া হয় তাহলে মস্তিষ্কের বিকাশ অনেক বেশি দ্রুত হয়।
৭. Lentils বা ডাল
এটি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন বি-৬, বি-৯, লৌহ রয়েছে। এটি ভাতের সাথে সবচেয়ে ভালো সমন্বয় তৈরি করে। যা মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারি। পাশাপাশি এটি Barin বা মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে।
৮.Coconut Oil বা নারিকেল তেল
নারিকেল তেলের অনেক গুন আছে। এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন কেউ ত্বকের যত্ন নিতে, কেউ গোসল করার সময়, কেউ খাবার তেল হিসেবে এটি ব্যবহার করে থাকেন। তবে দেখা গেছে যখন নারিকেল তেল খাওয়া হয় বা মৌখিকভাবে ব্যবহার করা হয় তখন এর কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি। অ্যালজাইমার(Alzheimer) রোগ আছে এমন ব্যক্তিদের উপর গবেষনা করে দেখা গেছে নারিকেল তেল ব্যবহার করে অ্যালজাইমার(Alzheimer) রোগের তীব্রতা কমানো সম্ভব।

৯. Avocado
Avocado সালাদের উপাদান হিসেবে খুবই জনপ্রিয়। এটি স্বাস্থ্যকর চর্বির অন্যতম উৎস। এটি মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে। যারা ফলে মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। আপনি যদি প্রতিদিন ১/২ টি Avocado আপনার খাবারের সাথে গ্রহণ করে তাহলে আপনার মস্তিষ্ক অনেকটা সুপার হিরোদের মস্তিষ্কের মত কাজ করবে। পাশাপাশি যারা ডায়েট করতে চান তাদের জন্য Avocado খাদ্য তালিকার অন্যতম প্রধান খাবার হতে পারে।
১০. Spinach বা শাকজাতীয় খাবার
আপনারা হয়ত অনেকেই Popeye The Sailor Man কার্টুনটি দেখেছেন। সেখানে Popeye যে খাবার খেয়ে শক্তিশালী হত সেটিও কিন্তু এই শাক। শাক যে আপনাকে শুধু শক্তিশালী করবে তাই নয়, আপনার Brain বা মস্তিষ্ককেও চিন্তা বা স্মৃতিশক্তির দিক দিয়ে শক্তিশালী করবে। প্রত্যেক ধরনের শাক জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমান ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারেল সহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। বিশেষ করে সবুজ শাকে পুষ্টি উপাদানের মাত্রা বেশি। এই উপাদান গুলো আপনার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি শর্করার চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। যার ফলে আর আপনার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়।
শেষকথাঃ
এই তালিকায় যে সব খাবার সম্পর্কে বলা হয়েছে সেগুলো কোন না কোন ভাবে আপনার Brain বা মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে৷ পাশাপাশি নানা ধরনের দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের সময় মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই আপনি এই তালিকার যেকোন খাবারই পছন্দ করে গ্রহন করতে পারেন৷
নিজেও খেতে থাকুন পাশাপাশি আপনার Brain কে খাওয়াতে থাকুন।

No comments:

Powered by Blogger.